এম. সুরুজ্জামান, শেরপুর প্রতিনিধি:
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেছেন “ছ্যাপ দিয়ে ল্যাপ দিবেন আর সেই ব্রীজের উপর দিয়ে আমি যাব। এটা চিন্তা করা ঠিক না। তিনি বলেন, রাতের বেলায় বৈঠক করে ক্যাশ বাটোয়ারা করলে কোন অন্যায় বা পাপ কাজ জায়েজ হয়ে যায় না। এটা মনে রাখবেন। মতিয়া চৌধুরী তাঁর নির্বাচনী এলাকা শেরপুর- ২ (নকলা- নালিতাবাড়ী) শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই নদীর উপর ভেঙ্গে যাওয়া সেতু তড়িঘড়ি করে চালু করায় এর সাথে জড়িতদের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন।
আজ মঙ্গলবার (১৯ মে) সকালে তিনি নালিতাবাড়ী উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নে কর্মহীন মানুষদের আর্থিক সাহায্য করতে স্থানীয় ইসলামিক মিশন এলাকায় যান। সেখান থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে নাকুগাঁও স্থলবন্দর এলাকার ভোগাই সেতু। সেই সেতুর উপর দিয়ে তার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নিম্নমানের কাজ করে কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে সেই সেতু জন সাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার তিনি ভীষণ ক্ষুব্ধ হন। এর প্রতিবাদে তিনি মাত্র ৫ মিনিটের সহজ রাস্তায় না যেয়ে প্রায় ২৩ কিলোমিটার ঘুরে রামচন্দ্রকুড়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আসেন এবং জনগনের উপস্থিতিতে এসব কথা বলেন।
এসময় শেরপুরের পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম পিপিএম, ইউএনও মো. আরিফুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
ওই এলাকার বাসিন্দা আক্তার হোসেন জানান, ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা ভোগাই নদীর উপর প্রায় ১০ বছর আগে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় ভোগাই সেতু। সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর প্রচেষ্টায় ২০০১ সালে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ এ কাজটি বাস্তবায়ন করে। ১২৮টি পাইল ও ৬টি ব্যাচে ১৮৬.৪০ মিটার দীর্ঘ এ সেতু নির্মাণে তিন দফায় ৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা থেকে বরাদ্দ বৃদ্ধি করে প্রায় ১২ কোটি টাকা করা হয়। সর্বাধিক ১০ টন মালামাল বহন করার ক্ষমতা রয়েছে এ সেতুটির। ২০০৯ সালে জনসাধারণ ও যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা এটি। এরপর এ সেতুর উপর দিয়ে সীমান্ত সড়ক চালু হয়।
নালিতাবাড়ীর নাকুগাঁও এবং হালুয়াঘাটের গোবরাকুড়া ও কড়ইতলী স্থলবন্দরের কয়লা ও পাথর বোঝাই ভারী যানবাহন চলাচল করত এ সেতু দিয়ে। কিন্তু গত দুই বছর ধরে ভোগাই নদী থেকে অবৈধভাবে যত্রতত্র বালু উত্তোলন করে একদল বালুখেকো ২০-৩০ টন ওজনের ভেজা বালুর ট্রাক ভোগাই সেতুর উপর দিয়ে নিয়ে যেতো। ঘটনাটি জানার পর সেতু ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশংকায় স্থানীয় এমপি মতিয়া চৌধুরী প্রশাসনকে এ ব্যাপারে বেশ কয়েকবার সতর্ক করেন। কিন্তু বিষয়টি গায়ে লাগায়নি তারা। অতিরিক্ত লোডের ফলে চলতি বছর ২৮ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার ভোগাই সেতুর একাংশ ধ্বসে পড়ে। পাশাপাশি সেতুর নিচের পাইল মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বন্ধ হয়ে যায় সেতুর উপর দিয়ে সবরকমের যাতায়াত।
এ ঘটনার পর নালিতাবাড়ীর সীমান্তবর্তী রামচন্দ্রকুড়া, পোড়াগাঁও, নয়াবিলসহ ১০ ইউপি চেয়ারম্যান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরে কাছে লিখিত অভিযোগ করে বালু উত্তোলন বন্ধ ও সেতু ধ্বংসের সাথে সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবী জানান।
এদিকে, তড়িঘড়ি করে স্থানীয় প্রশাসন ও সড়ক ও জনপথ বিভাগ ছোটখাট মেরামত করে ব্রীজটি যাতায়াতের জন্য চালু করে দেয়।
এ ব্যাপারে শেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন আহমেদ বলেন, অতিরিক্ত লোডে সেতুর একাংশ ড্যামেজ হয়। সেতুর নিচে আলাদা প্লেট লাগিয়ে ঢালাই করেছি। এটি এখন আগের অবস্থায় ফিরে গেছে।